হিউগেনট কারা ছিলেন | হিউগেনো কারা | হিউগেনট কি | Who are Huguenot | What is Huguenot

 

হিউগেনট কারা ছিলেন ? Who are Huguenot ?

হিউগেনট বা প্রোটেস্ট্যান্ট কারা ছিলেন ?

হিউগেনট বলতে বোঝানো হতো প্রোটেস্ট্যান্টদের। খ্রিস্টানদের ভিতরে রোমান ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সময় এই হিউগেনট বা প্রোটেস্ট্যান্ট এর উত্থান ঘটে। তাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম আন্দোলন। এই সম্প্রদায় লুথার,ক্যালভিন,উইলিয়াম ওকাম প্রমুখদের অনুসরণ করেছিল।একেবারে প্রথম দিকে হিউগেনট কারা ছিলেন, সে সম্পর্কে বলতে হয় ষোড়শ শতাব্দীতে ধর্মসংস্কার আন্দোলন শুরু হয় তখন রাজবিরোধী বহু ধর্মীয় উপদলের উদ্ভব ঘটে । এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায় ছিল হিউগেনট। এদের নেতা ছিলেন ফ্রান্সিস হটম্যান। প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন লুথার ও কেলভিনকে অনুসরণ করেছিল ঠিকই কিন্তু ফ্রান্সের হিউগেনটরা মূলত অনুসরণ করেছিল ক্যালভিনকে।

ফরাসি রাজপরিবার ভালোয়ারা ছিল রক্ষণশীল ক্যাথলিকপন্থী গাইস অভিজাত পরিবার প্রভাবিত। অন্যদিকে নাভারে অঞ্চলের শাসক বুরবোরা ছিল প্রোটেস্ট্যান্টপন্থি ।ফরাসি প্রোটেস্ট্যান্ট হিউগেনটরা বুরবোদের নেতৃত্বে ধর্মযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল । পরবর্তীকালে ফ্রান্স উদারনৈতিক ' পলিতিক ' দল গঠিত হলে হিউগেনটরা তাতে সামিল হয়েছিল। এই দলটির মূলদাবির মধ্যে অন্যতম ছিল ব্যক্তি স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকার এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।


ফ্রান্সের হিউগেনটদের আন্দোলনের ফলে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা চরমপর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় এবং গৃহযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। সংখ্যালঘু সত্ত্বেও ফরাসিরা ক্যালভিনপন্থি হিউগেনটরা ছিল অত্যন্ত সঙ্ঘবদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তারা রাষ্ট্রের এবং ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে আগ্রাসী ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। হিউগেনটদের প্রতিবাদ স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ইতিপূর্বে দ্বিতীয় ফ্রান্সিস নানাপ্রকার দমন-পীড়ন মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলেন। তাদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির জন্য গঠিত হয়েছিল বিশেষ আদালত। কিন্তু তা সত্বেও হিউগেনটদের প্রভাব পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। মন্টমরেন্সি অভিযাত গোষ্ঠীর অ্যাডমিরাল কলিগনি (Coligny) এবং বুরবো রাজকুমার কঁদে (Conde) হিউগোনাটদের পক্ষে যোগদান করলে তাদের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফ্রান্সের প্রত্যন্ত দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলের প্রদেশগুলোতে হিউগেনটদের প্রভাব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের প্রাচীরঘেরা নগরগুলি প্রায় দুর্ভেদ্য দুর্গে রূপান্তরিত হয়েছিল।

১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে জাভি নামক এক ছোট্ট শহরের ভিতর দিয়ে সসৈন যাবার সময় গাইসের ডিউক ফ্রানকইস খামারের ভিতর একটি প্রকাশনার ধর্মীয় সমাবেশ দেখে এতটাই অসন্তুষ্ট হয়েছিল যে তিনি তৎক্ষণাৎ তাদের নির্দেশ দেন ওই প্রতিবাদীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে । ফলে নির্মম অস্ত্রাঘাতে অসংখ্য হিউগেনটটের মৃত্যু ধর্মযুদ্ধকে তীব্রতর করে তোলে। অতঃপর যে ধর্মীয় সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিল তা ছিল প্রায় অন্তবিহীন ও রক্তাক্ত । ১৫৭২ সালের আগস্ট মাসের ২৪ তারিখে সেন্ট বার্থোলোমিউ দিবসে যে জঘন্য নরকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল তাতে নিহত হয়েছিল প্রায় তিন হাজার হিউগেনট। শেষ পর্যন্ত ১৫৯৮ সালে ফরাসি সম্রাট চতুর্থ হেনরি 'Edict of Nantes ' বা নাতের ঘোষণাপত্র দ্বারা ধর্মাচরণের স্বাধীনতা দেন তবে এতেও কিন্তু ক্যাথলিকদের সঙ্গে তাদের গোলযোগ শেষ হয়নি । হিউগেনট এরপর কেলভিনের মতবাদকে গ্রহণ করে ছড়িয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ইত্যাদি দেশে।

Previous Post Next Post