পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ব্রহ্ম পদার্থের রহস্য কি ?
১. জগন্নাথ মন্দিরের ব্রহ্ম পদার্থের ধারণা
ব্রহ্ম পদার্থ বা ব্রহ্মা পদার্থ হল পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এক বিশেষ রহস্যময় দিক। এটি এমন এক পবিত্র বস্তু হিসেবে বিবেচিত যা মন্দিরের প্রধান দেবতা জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার মূর্তির অন্তরে স্থাপন করা হয়।
২. ব্রহ্ম পদার্থের উৎস কোন জায়গা থেকে ?
ব্রহ্ম পদার্থের উৎস নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য নেই। মনে করা হয় এই ব্রহ্ম পদার্থ হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরীরের সেই অংশ যেটা তাঁর মৃত্যুর পর আগুনে পুড়ে যায়নি, সেই অংশটা হচ্ছে তাঁর হৃদপিণ্ড ( এটি নিয়ে দ্বিমত ও আছে ) । এই বস্তুটিকে দেবতার আত্মা বা চেতনাশক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, এটি একটি চিরন্তন শক্তি যা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়।
৩. নবকলেবর ও স্থানান্তর প্রথা
প্রতি আট ,বারো বা ঊনিশ বছর পর পর মন্দিরে এই নবকলেবর উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেবতার মূর্তিগুলি পাল্টানো হয়। এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছিল ১৫৭৫ সালে। এই উৎসবের সময় পুরোনো মূর্তির অন্তরে থাকা ব্রহ্ম পদার্থ বিশেষ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে নতুন মূর্তিতে স্থানান্তর করা হয়। তবে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুধুমাত্র মন্দিরের প্রধান পুরোহিত এবং কয়েকজন নির্বাচিত ব্যক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এবং এটি সম্পূর্ণ গোপনীয়।
৪. ব্রহ্ম পদার্থের প্রকৃতি কি
প্রচুর বিতর্ক ও রহস্য রয়েছে এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ব্রহ্ম পদার্থ নিয়ে। কেউ কেউ বলেন এটি একটি প্রাচীন নিদর্শন, কেউ বলেন এটি এক ধরনের রহস্যময় শক্তিধর বস্তু। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই জানেন না আসলে এটি দেখতে কেমন বা এর প্রকৃতি কী। বলা হয় এই ব্রহ্ম পদার্থ কেউ যদি দেখে বা স্পর্শ করে তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য।
৫. ব্রহ্ম পদার্থ স্থানান্তরের গোপনীয়তা
পদার্থ দেবতার দের মূর্তির মধ্যে অনন্ত করার সময় এই স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি এতটাই গোপনীয়ভাবে করা হয় যে মন্দিরের পুরোহিতদেরও চোখ মুখ ঢাকা থাকে। কেউ এই রহস্যময় বস্তুটি কখনো দেখতে পান না, কারণ এটি অতিশয় পবিত্র এবং বিশেষ ধরনের আচার-বিধির মাধ্যমে এর স্থানান্তর করা হয়। বলা হয়, এর অস্তিত্ব প্রকাশ হলে অপশক্তির প্রভাব ঘটতে পারে। ২০১৫ সালে যখন এই স্থানান্তর এর অনুষ্ঠান নব কলেবর করা হয়েছিল তখন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ লাইন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং পুরী মন্দিরটি করা পাহারাদারের মধ্যে রাখা হয়েছিল।
পুরি জগন্নাথ মন্দিরের ব্রহ্ম পদার্থ হিন্দু ধর্মের এক অমূল্য রহস্য, যা শুধুমাত্র ভক্তদের অন্তরে নয়, গোটা ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে টিকে আছে।