পেশাদারি ইতিহাস বলতে কি বোঝায় ? পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব লেখ । পেশাদারী ও অপেশাদারী ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো ।

 

পেশাদারি ইতিহাস বলতে কি বোঝায় ? পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব লেখ । পেশাদারী ও অপেশাদারী ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো ।

Table of Contents



পেশাদারি ইতিহাস কাকে বলে ?

সমাজ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ইতিহাস। ইতিহাস মানব সভ্যতার বিবর্তনের আলোকে অতীতের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও ব্যাখ্যার ধারা বর্তমান কে গড়ে তোলে। তাই ইতিহাস নির্মাণে পেশাদারিত্বের মনোভাব প্রয়োজন।যদি কোন ঘটনার সত্যতা ও বাস্তবতা বজায় রেখে কোন রকম ভাবে বা পক্ষপাতিত্ব না করে সুসংবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ইতিহাস রচনা করা যায় তাহলে সেটি পেশাদারী ইতিহাস নামে পরিচিত হয়। পেশাদার ইতিহাস সংস্থাগুলি নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।


পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব

ভূমিকা : ইতিহাস হল মানবজাতির অতীত কর্মকাণ্ডের কলানক্রমিক ও ধারাবাহিক লিখিত উপাদান। ইতিহাস থেকে আমরা অতীতের কোনো দেশ বা জাতির অতীত সম্পর্কে জানতে পারি। বর্তমান শতাব্দীতে ব্যবহারিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটলেও ইতিহাস এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব মোটেই কমেনি।



পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল।



অতীতের ধারণা দানে


সুদূর অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত অনেকে ঘটনা ই ঘটে গেছে পৃথিবীতে। পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব, মানবদশা, বন্য দশা, সভ্যতার উদয় ও অগ্রগতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও ধর্মনীতি সমস্ত কিছু ধারণা দেয় ইতিহাস। ইতিহাসের পাতায় উল্লেখিত ঘটনা গুলোকে মাথায় রেখেই আধুনিক প্রজন্ম সঠিক পথে চলতে পারে। এক কথায় অতীতে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলি কে ধরে রাখে ইতিহাস।


জ্ঞানের সুষম বিকাশ


অনেক বিষয় ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় তা হয়ে উঠেছে জ্ঞানের ভান্ডার। সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন ,সমকালীন সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি ও মহাপুরুষদের কর্মকাণ্ড, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, সংস্কারকার্য,বিপ্লব,আন্দোলন প্রভৃতি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচনায় স্থান লাভ করে।


ধারাবাহিকতা


সুপ্রাচীন অতীত থেকে আজ পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনা বা কাহিনীকে ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে ইতিহাস।ইতিহাস বিভিন্ন যুগের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে। বর্তমান প্রজন্ম প্রাচীন ভারতে মানুষ কবে এবং কিভাবে মেহেরগড়, সিন্ধু , বৈদিক প্রভৃতি সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত করল এবং ভারতের ইতিহাসে কিভাবে প্রাচীন মধ্য ও আধুনিক যুগের উদ্ভব ঘটলো তার ধারাবাহিক কাহিনী ইতিহাস থেকে জানা যায় ।


দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্কতা


বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে বহু জন জাতির সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। ইতিহাস সে সব ঘটনার সাক্ষী। উদাহরণস্বরূপ ওইনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক শোষণের ফলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৭০ খ্রি:),পঞ্চাশের মন্বন্তর(১৯৪৩ খ্রি:) উল্লেখযোগ্য ।পরবর্তীতে মানুষ কিভাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সে সব সম্পর্কে সতর্কতা পাওয়া যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিকবিদদের গবেষণা থেকে।




ধর্মকে সহিষ্ণুতা


ইতিহাস সকল বিষয় নিয়েই আলোচনা করে তাই সেখানে মানুষের ধর্মীয় জীবনও বাদ নেই।ইতিহাস থেকেই জানা যায় মুসলিমদের সাথে খ্রিস্টানদের ২০০ বছর ধরে চলা ক্রুসেড বা ধর্ম যুদ্ধ সম্পর্কে।এছাড়াও গান্ধীজীর খিলাফত আন্দোলনের সাথে জাতীয় আন্দোলনকে যুক্ত করার সম্পর্কেও আমরা জানতে পারি। ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা কোন ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল অর্থাৎ সম্রাট অশোকের ধর্মবিজয় নীতি, সম্রাট আকবরের " সুল -ই-কুল " বা ধর্মসহিষ্ণুতা সম্পর্কে জানতে পারি।


রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়ন


ইতিহাস থেকে অতীত কালের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শাসকের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম জানা যায় ।কোন শাসকের কোন রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো জাতীয় জীবনে বিপদ ডেকে এনেছিল সেই সম্পর্কে জানা যায়,অপরদিকে কোন পদক্ষেপ গুলো উন্নতি এনেছিল সেই সম্পর্কেও জানা যায়।যেমন মোগল সম্রাট আকবরের রাজনৈতিক প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলি বর্তমানে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অনেকটাই প্রাসঙ্গিক।


জাতীয়তাবাদের বিকাশ


নিজ দেশ বা জন জাতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশকে জাতীয়তাবাদ বলে । ইতিহাসে নিজ নিজ জাতীর অতীত গৌরব গাঁথা মহিমা গুলো উল্লেখিত ও লিপিবদ্ধ থাকে এর ফলে কোনো গোষ্ঠী ইতিহাস পড়ে নিজ নিজ জাতি বা গোষ্ঠীর গৌরব জেনে নিজেদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলে। ইতিহাস থেকেই আমরা বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর সাহস জোগায়।


পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ


ইতিহাসে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা করা আছে ।ইতিহাস পরেই জানা যায় কোনো কোনো পররাষ্ট্রনীতি গুলো দেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি করে আবার কোন গুলো শত্রুতার সৃষ্টি করে।


অর্থনৈতিক উন্নতির সোপান


মানবসমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অর্থনীতি। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধ, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব প্রভূতি পিছনে অর্থনীতি একটু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কোনো কোনো অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গুলো রাষ্ট্রের উন্নতি সাধন করে কোন গুলো রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করে সেই সব সম্পর্কে আমরা জ্ঞান পায় ইতিহাস থেকে।


মূল্যয়ন


বর্তমানে ইতিহাস কাল শুধু রাজা বাদশা বা সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের কাহিনী নয় মানব সমাজের ধারাবাহিক বিবর্তন সমাজ ধর্ম রাজনীতি ও অর্থনীতির প্রকৃতি প্রকৃতি সবকিছু ইতিহাস আলোচ্য বিষয়। এজন্য উইনস্টন চার্চিল বলেছেন যে সুদূর অতীতে ফিরে তাকাতে পারলে ভবিষ্যতেও তাকাতে পারবে । ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে মানব সমাজ আরো সুন্দরী ও সুরক্ষিত হবে। হেগেল বলেছেন, ইতিহাসের দুর্ভাগ্য যে,ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।

পেশাদারী ও অপেশাদারী ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য ।


পেশাদারি ইতিহাস অপেশাদারী ইতিহাস
এই ইতিহাসের বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। এই ইতিহাসের বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা কম।
এই ইতিহাসে অর্থনীতি মানবসমাজের একটু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ইতিহাসে অর্থনীতি অত্যান্ত নগণ্য বিষয়।
এই ইতিহাসের উপাদানগুলি যৌক্তিক ও পক্ষপাতিত্বহীন ভাবে রচিত হয়। এই ইতিহাসের উপাদান গুলি ভাবাবেগ ও পক্ষপাতিত্ব যুক্ত।
ধারাবাহিক ও কলানুক্রম এই ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধারাবাহিক ও কলানুক্রম এই ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই না।



Reference
  • "ভারতের ইতিহাস" - জে. মুখোপাধ্যায়
  • অন্যন্ন লিখিত নথি


Previous Post Next Post