আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো সপ্তম শ্রেণীর যে ভূমিরূপ অধ্যায় রয়েছে সেই অধ্যায় সম্পর্কে।আজকে আলোচনায় থাকছে ভূমিরূপ কাকে বলে ?প্রধানত কত ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায় ?ভূমিরূপ গঠনের প্রক্রিয়া । ভঙ্গিল পর্বত।
![]() |
চিত্র: তৃতীয় পক্ষের রেফারেন্স |
১. ভূমিরূপ কাকে বলে ?
পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর নানান আন্তর্জাত ও বহিরজাত ভু গাঠনিক শক্তির ক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভু পৃষ্ঠের যে বিভিন্ন বৈচিত্র্য ও আকারের সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিরূপ বলে।২. পৃথিবীতে প্রধানত কত ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায় ?তাদের বর্ণনা করো ।
উৎপত্তি,গঠন, বৈশিষ্ট এবং বৈচিত্রের উপর ভিত্তি করে ভূমিরূপ প্রধানত তিনটি ধরনের বিভক্ত করা হয়। যথা পর্বত,মালভূমি ও সমভূমি।
ক) পর্বত : সাধারণত ৭০০ মিটার উচ্চতা যুক্ত শিলা দ্বারা গঠিত,খাড়া ঢাল যুক্ত ভূমিরূপ হলো পর্বত। যেমন হিমালায়।
খ) মালভূমি : সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট খাড়া ঢাল যুক্ত বিস্তীর্ণ ভু ভাগকে মালভূমি বলে ।যেমন পামীর।
গ) সমভূমি : সাধারণত ৩০০ মিটারের কম উচ্চ নিচু সমতল,বিস্তীর্ণ ভু ভাগকে সমভূমি বলে।যেমন লোয়েস সমভূমি।
৩. ভূমিরূপ গঠনের প্রক্রিয়া
সংজ্ঞা : যে সকল পদ্ধতি ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভূমিরূপ পরিবর্তন ও বিবর্তন করে,তাকে ভূমিরূপ প্রক্রিয়া বলে।ক. আন্তর্জাত প্রক্রিয়া :
ভু অভ্যন্তরীণ শক্তি সমূহ,যা গুরুমন্ডলের অন্তর্গত আর্ধতরল পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট, তা ভূমিরূপ এর পরিবর্তন করলে,তাকে আন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে,এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে একে ধীরগতি সম্পন্ন প্রক্রিয়া এবং আকস্মিকভাবে ভূমিরূপ এর পরিবর্তন ঘটলে তাকে আকস্মিক প্রক্রিয়া বলে ।যেমন ভূমিকম্প ও অগ্নিউৎপত।
আন্তর্জাত প্রক্রিয়া ভু ত্বকের সাথে উলম্ব ভাবে কাজ করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উত্থান বা পতন করালে, তাকে মহিভাবক আলোড়ন বলে। এর ফলে মহাদেশ, মালভূমি,সমুদ্র প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।
আন্তর্জাত প্রক্রিয়া ভু ত্বকের সাথে অনুভূমিক ভাবে কাজ করে শিকার সংকোচ ও পীরণের মাধ্যমে যখন শিলায় ভাঁজ ফেলে পর্বতের সৃষ্টি করে,তাকে গিরিজনি আলোড়ন বলে।এর ফলে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়।
খ. বাহিরজাত প্রক্রিয়া :
অবহবিকার, পুঞ্জিতস্খলন, নদী, হিমবাহ, বায়ু,সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমোজল,প্রভৃতি শক্তি ভূপৃষ্ঠে বাইরে থেকে সর্বদা ক্ষয়,পরিবহন ও সঞ্চয় করে প্রাথমিক ভূমিরূপের আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়,একে বাহিরজাত প্রক্রিয়া বলে।৪.পর্বতের বৈশিষ্ট গুলি কি কি ?
- পর্বত সাধারণত ৯০০ মিটারের বেশি উচ্চ হয়।
- এটি অনেক দূর বিস্তৃত খাড়া ঢাল যুক্ত হয়ে থাকে।
- পর্বতের উপরিভাগের সরু সূচালো খাড়া ঢাল যুক্ত অংশটিকে পর্বত শৃঙ্গ বা চুঁড় বলা হয়।যেমন মাউন্ট এভারেস্ট।
- দুটি পর্বত চুঁড়ার মাঝে নিচু খার জাতীয় অংশকে পর্বত উপত্যকা বলে।
- অনেকগুলো পর্বত শৃঙ্গ ও উপত্যকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করলে তাকে পর্বত শ্রেণী বলে।
- অনেক গুলি পর্বতশ্রেণী বিভিন্ন দিক থেকে এসে এক জায়গায় মিশিলে তাকে পর্বত গ্রন্থি বলে। যেমন পামির গ্রন্থি।
৫.উৎপত্তি অনুযায়ী পর্বতের শ্রেণী বিভাগ :
উৎপত্তি অনুযায়ী পর্বতকে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয় ।ক.ভঙ্গিল পর্বত
খ.স্তূপ পর্বত
গ.ক্ষয়জাত পর্বত
ঘ.আগ্নেয় পর্বত
৬.ভঙ্গিল পর্বত:
অগভীর জলরাশি বা মহিখাতের সঞ্চিত পললরাশি পর্শবর্তি ভূ ভাগ বা পাতের পার্শ্ব চাপের ফলে ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠে এসে যে পর্বত এর সৃষ্টি করে,তাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে।ভঙ্গিল কথার অর্থ হল ভাঁজ।ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ :
এশিয়ার হিমালয়,ইউরোপের আল্পস,উত্তর আমেরিকার রকি,দক্ষিণ আমেরিকার অন্দিজ ইত্যাদি।
ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট:
- মহিখাত এর মধ্যে পার্শ্ববতী ভু ভাগ থেকে ক্ষয়ের ফলে আসা পলি সঞ্চিত হয়।
- এই পলল রাশি মহিখাত এর তলদেশে চাপের সৃষ্টি করে ফলে তলদেশে যত বসে যায়,পাশের ভু ভাগ তোর কাছাকাছি আসে।
- পাশের ভূভাগের পার্শ্বচাপ এর ফলে ওই পললরাশি ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠে এসে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করে।
- এই পর্বতের উচ্চতা খুব বেশি হয় এবং চুড়াগুলি শঙ্কু আকৃতির হয়।
- এই পর্বতের প্রচুর জীবাশ্ম,কয়লা এবং খনিজ তেল পাওয়া যায়।