History Model Activity Task Part 2 Class 9 | ফরাসি বিপ্লব কিভাবে সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘটিয়েছিল?সন্ত্রাসের রাজত্ব নামকরণ কতটা যুক্তিযুক্ত?

 আমাদের সাথে জুড়ে থেকে প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হন অথবা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করুন।লিংক নীচে দেওয়া আছে।

History Model Activity Task Part 2 Class 9 | ফরাসি বিপ্লব কিভাবে সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘটিয়েছিল?সন্ত্রাসের রাজত্ব নামকরণ কতটা যুক্তিযুক্ত?

নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর লেখ।

১. ফরাসি বিপ্লব কিভাবে সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘটিয়েছিল?

উত্তর: অষ্টাদশ শতকে ফরাসি বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী বুর্জোয়া নেতারা সামন্ত প্রভুদের অধিকার ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়। ফরাসি বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে রাজা ষোড়শ লুই তৃতীয় সম্প্রদায় তথা জাতীয় সভার উপর সংবিধান রচনার দায়িত্ব অর্পণ করলে জাতীয় সভা সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়। এই সভা মূল সংবিধান রচনার আগে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল তার মধ্যে একটি ছিল সামন্ততন্ত্রের বিলুপ্তি। তৃতীয় শ্রেণীর চাপে অভিজাত ও যাজকরা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ৪ আগস্ট এক ঘোষণার মাধ্যমে সামন্ততান্ত্রিক অধিকারগুলি ত্যাগ করে।

জাতীয় সভা ১১ আগস্ট এর ঘোষণার মাধ্যমে জানাই যে এখন থেকে সামন্ত প্রথা বিলুপ্ত হলো। সামন্ত প্রথার বিলুপ্তির ফলে ফ্রান্সের ভূমিদাস প্রথা, বেগার শ্রম বা করভি প্রথা, ধর্ম কর, অভিজাত দের বিশেষ অধিকার যথা সরকারি চাকুরিতে অগ্রাধিকার, বৈষম্যমূলক কর, জমি কর, অন্ত:শুল্ক প্রথা প্রভৃতি লোপ পায়। এই ঘোষণার ফলে রাজার খাস জমি ও গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ভাবেই ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্রের বিলোপ ঘটিয়ে ফরাসি বিপ্লব এক নতুন যুগের উন্মেষ ঘটিয়েছিল।

২. "সন্ত্রাসের রাজত্ব" নামকরণ কতটা যুক্তিযুক্ত?

উত্তর: ফ্রান্সে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৩ মাস জেকোবিনরা যে ধরনের শাসন বজায় রেখেছিল তা ফ্রান্স তথা বিশ্ব ইতিহাসে সন্ত্রাসের শাসন বা সন্ত্রাসের রাজত্ব নামে খ্যাত।

          জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসের শাসন ক্রমে ভয়াবহ হয়ে ওঠে। প্রায় ৫০হাজার মানুষ সন্ত্রাসের বলি হয় এবং বহু মানুষ চিরদিনের মত নিখোঁজ হয়। সন্দেহের আইন দ্বারা প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ গ্রেপ্তার হন। এইরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে জ্যাকোবিন দলের আতঙ্কিত সদস্যরা ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই রোবসপীয়র ও তার অনুগামীদের বন্দি করে ও ২৮জুলাই রোবসপিয়ার কে গিলেটিনে হত্যা করা হয় এবং সন্ত্রাসের শাসনের অবসান ঘটে।

          লেফেভর, মাতিয়ে প্রমূখ ঐতিহাসিকরা মনে করেন অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য সন্ত্রাসের শাসন প্রয়োজন ছিল। এরা মনে করেন সন্ত্রাসের শাসনের জন্য ফ্রান্সে কালোবাজারি দমন, ন্যায্য হারে কর আদায় সম্ভব হয়। ঐতিহাসিক টেলর বলেছেন "সন্ত্রাস বিপ্লবকে রক্ষা করেছিল"।

          ঐতিহাসিক তেইন মনে করেন সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল মূলত ক্ষমতালোভী, সুবিধাভোগী একশ্রেণীর মানুষের ক্রিয়াকলাপ। তার মতে সন্ত্রাসের শাসনে নিরাপত্তা বলে কিছু ছিল না। কারণ কেবল সন্দেহের বশে বিনাবিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। লুই ব্লাঙ্ক এর মতে "সন্ত্রাস বিপ্লবকে রক্ষা করেনি, সন্ত্রাস বিপ্লবকে পঙ্গু করে দেয়"।

          সুতরাং, ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত সময় কালের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে যেমন এই সময়কে "সন্ত্রাসের রাজত্ব" বলা যায়। আবার বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণও ইতিবাচক দিক থেকে হোক বা নেতিবাচক দিক থেকে হোক এই সময় কালকে "সন্ত্রাসের রাজত্ব" হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন। তাই "সন্ত্রাসের রাজত্ব" নামকরণটি এক্ষেত্রে যথোপযুক্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি।

৩. নিচের প্রতিটি বিষয়/ব্যক্তি সম্পর্কে একটি করে বাক্য লেখ।

ক. অসিয়া রেজিম

খ. লেতর-দ্য-ক্যাশে

গ. সাঁকুলোৎ

ঘ. রোবসপীয়র

উত্তর:

ক. অসিয়া রেজিম:-

ফরাসি বিপ্লবের আগে ফ্রান্স তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থা অসিয়া রেজিম বা পুরাতনতন্ত্র ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

খ. লেতর-দ্য-ক্যাশে:- 

লেতর-দ্য-ক্যাশে হল বিপ্লবের আগে ফ্রান্সের প্রচলিত এক ধরনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, যার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তিকে বন্দি করে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখা হতো।

গ. সাঁকুলোৎ:-

 ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের শহর ও গ্রামের দরিদ্র, নিঃস্ব, ভবঘুরে প্রমূখ জনতাকে সাঁকুলোৎ বলা হত।

ঘ. রোবসপীয়র:- 

রোবসপিয়ার ছিলেন ফ্রান্সের জ্যাকোবিন দলের নেতা এবং সন্ত্রাসের রাজত্বের প্রধান পরিচালক।

৪. উপযুক্ত তথ্য সহযোগে নিচের ছকটি পূরণ করো -


যুদ্ধ বিবাদমান পক্ষ সময়কাল ফলাফল
ট্রাফালগারের যুদ্ধ ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়েছিল। ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ নৌবাহিনী ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ নৌবহর ধ্বংস করে। ফরাসি নৌবহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় ভবিষ্যতে ফ্রান্সের পক্ষে ইংল্যান্ডকে প্রতিহত করার সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়। নেপোলিয়ন ফরাসি সাম্রাজ্য গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ভেঙে যায়।
লিপজিগের যুদ্ধ নেপোলিয়ন ও চতুর্থ শক্তি জোটের মধ্যে লিপজিগের যুদ্ধ হয়েছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ। এই যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হয়। পরাজয়ের ফলে নেপোলিয়নের সুবিশাল সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। হল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করে এবং অস্ট্রিয়া তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পায়।
ওয়াটারলুর যুদ্ধ নেপোলিয়ন ও ইউরোপের সম্মিলিত শক্তিবর্গ বা মিত্র শক্তিবর্গের মধ্যে ওয়াটারলুর যুদ্ধ হয়েছিল। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটন ও ব্রুকারের হাতে নেপোলিয়ান পরাজিত হন। এরপর বিজয়ী শক্তিবর্গ তাকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেন এবং সেখানে ১৮২১খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়।
Previous Post Next Post